Brenton Harris Tarrant.
এই ক্রুসেডার ব্যক্তি
গেলো ১৫ তারিখ Modern Warfare এর মতো
ক্রাইস্টচার্চের এক মাসজিদে ঢুকে হামলা চালিয়ে রীতিমতো অর্ধ শতাধিক মুসলিমদের
হত্যা করে। দুইবার ম্যাগাজিন লোড করে। আমি মনে করি না, “সে কেবলই সন্ত্রাসী,
সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই” বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় যখন ব্রেন্টন নিজেই
তার অস্ত্রে ইসলামের বিরাট বিরাট ঐতিহাসিক শত্রুদের নাম লিখার মাধ্যমে প্রমাণ করার
চেষ্টা করেছে যে, সে তাদেরই উত্তরসূরী।
কথা বলব ভিন্ন ইস্যু
নিয়ে। আমি আশা করছি দ্বীনের কারণে মারা যাওয়ার কারণে আল্লাহ তাদেরকে শহীদ বলে কবুল
করবেন। সাথে সাথে তারা সদ্য নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবেন। কিন্তু কেউ যদি ভিডিওটা
ভালো করে দেখেন দেখা যাবে মানুষ যখন বুঝেছে যে গুলি হচ্ছে, তখন তারা পালাচ্ছিলো
বাঁচার জন্য। এছাড়াও একজন মুসল্লি বলছেন, “আমি শুধু দোয়া করছিলাম যেন তার বুলেট
শেষ হয়ে যায়”।১ অনেকে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় নিহত হয়েছে। অথচ তাদের মধ্যে
একজন বা দুইজনও যদি বিষয়টা বোঝার পর হামলাকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো, তাহলে আরো কম
নিহতের সংখ্যা কী আশা করা যেত না?
দুটি পয়েন্ট বলি।
১। হালাকু খানের আমলে
এক তাতার এক মুসলিমকে ধরে এনে তার মাথা নিচে রেখে এভাবে থাকতে বলল যেন সে তরবারি
এনে তাকে হত্যা করতে পারে। সে তাতার তরবারি নিয়ে এসে কিছুক্ষণপর তাকে হত্যা করলো।
মুসলিমটাকে যেমন থাকতে বলা হয়েছে তেমনই থাকলো। না সে পালানোর কোনো চিন্তা করেছে,
না সে সেই ‘একজন’ তাতারকে প্রতিরোধ করার কোনো চেষ্টা করেছে। (!)২
২।অ্যামেরিকান মুসলিমদের উপর
PEW রিসার্চ সেন্টারের চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপের রেসাল্টঃ
১) বর্তমানে অ্যামেরিকান মুসলিমদের ৫২% মনে করে সমকামিতাকে সমাজের মেনে নেওয়া উচিৎ [homosexuality should be accepted by society]।
২) এদের মধ্যে ২৮% মুসলিম নিজেদের “গভীর ভাবে ধার্মিক” [deeply religious] মনে করে।
৩) ২০০৭ এ অ্যামেরিকান মুসলিমদের ২৭% সমকামিতাকে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতো। অর্থাৎ গত দশ বছরে অ্যামেরিকান মুসলিমদের মধ্যে সমকামিতার ব্যাপারে সমর্থন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি। ৩
১) বর্তমানে অ্যামেরিকান মুসলিমদের ৫২% মনে করে সমকামিতাকে সমাজের মেনে নেওয়া উচিৎ [homosexuality should be accepted by society]।
২) এদের মধ্যে ২৮% মুসলিম নিজেদের “গভীর ভাবে ধার্মিক” [deeply religious] মনে করে।
৩) ২০০৭ এ অ্যামেরিকান মুসলিমদের ২৭% সমকামিতাকে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতো। অর্থাৎ গত দশ বছরে অ্যামেরিকান মুসলিমদের মধ্যে সমকামিতার ব্যাপারে সমর্থন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি। ৩
এ দুটো পয়েন্টের বেসিক
মিলের জায়গাটা হলো- পরাজিত মানসিকতা।
এছাড়াও আরেকটা ব্যাপার
আছে। যখন এই হামলা হয় তখন আমরা যারা এই হামলার পর পোস্ট দেওয়া শুরু করলাম, “শুধু
মুসলিমরা সন্ত্রাসী হয় না, খৃস্টানরাও হয়” এর মানে আমরা By default ধরে নিচ্ছি মুসলিমরা সন্ত্রাসী আর Burden of Proof হলো
কাফিররাও সন্ত্রাসী। তারপর প্রশ্ন, মুসলিমদের মধ্যে আমরা কাদেরকে সন্ত্রাসী বলছি?
যাদেরকে অ্যামেরিকা সন্ত্রাসী বলে। আমরা তালিবানের ভাইদের, হামাসের ভাইদের
প্রতিরোধ আন্দোলনকে সন্ত্রাস বলছি। মুসলিমরা সন্ত্রাসী না- এটা বারবার যিকর করার
মাধ্যমে আমরা কার কাছে প্রমাণ করতে চাচ্ছি আমরা শান্তিবাদী? বায়োলজিক্যাল ওয়েপন
দিয়ে ইরাকে ৫ মিলিয়ন শিশু হত্যাকারীদের কাছে?
স্বাভাবিকভাবে দাওয়াহ
কিংবা শিক্ষা অর্জনের মতো দুয়েকটা পয়েন্ট বাদে কাফের রাষ্ট্রে মুসলিমদের থাকাটা
ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না। দিনের পর দিন কাফের রাষ্ট্রে বসবাস করা মুসলিমরা সবসময় কুফরি আর
শিরকের ব্যাপারে Its
OK টাইপ
একটা ভিউ বহন করতে হয়। যার পরিস্থিতিতে ইসলামকে একটি বিজয়ী দ্বীনের পরিবর্তে
মাসজিদকেন্দ্রিক একটি ‘ধর্মে’ পরিণত করার একটা প্রচেষ্টা করা হয়।খুনী ট্রাম্পের শোক! |
যেমন ইউএসের Deen Squad নামের একটি সো কলড ইসলামিক ব্যান্ড (!) আছে যার কন্সার্ট কিংবা স্টেজ পারফর্মেন্স দেখলে যে কেউ বুঝবে যে কেবল লিরিক্স বাদে Justine Biberদের সাথে তাদের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। তাদের কাজের ব্যাপারে মডারেট দায়ী ওমর শহীদ ফাতওয়া ইস্যু করেন,
“Deen Squad, as it were, are fighting back against the Islamophobes, challenging every stereotype of what it is to be a Muslim today. They are speaking to a new generation of Muslims in a way that nobody has done, or dared to, before. They are loud, bold, confident and, dare I say, cocky. Their music permeates various indirect but powerful messages to the collective Muslim psyche, one of which seems to be: be proud of who you are, your beliefs, cultures, ethnicities, even right down to your clothes. But are they going about this all in the right way? Are they actually leading Muslims astray and can their music be outright classified as haram, or is there more to it?”৪এছাড়াও মার্কিন ফেইথ লিডার ইয়াসির ক্বাদিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, “You don’t oppose homosexuality?” তিনি জবাব দেন, “Politically, YES. But morally I don’t agree with it.”৫
এভাবে তারা শারীয়াহকে একটি ভ্যারিয়েবল বিষয়ে পরিণত করেন। তারা ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনকে যে কোনোভাবে ইসলামাইজড করার চেষ্টা করেন। কুফরের সাথে সহাবস্থানের কারণে মরিসকোদের অবস্থা তো ইতিহাসই সাক্ষী দেয়।
এর ফলে কী হয়?
এর ফলে ইসলাম নামের এই দ্বীনটি- যেটি সংস্কারযোগ্য নয়, তা তার স্বকীয়তা হারায়।
কাফের রাষ্ট্রে বসবাস করার আইডিয়া চতুর্দশ দশক পর্যন্তও ছিলো না। তারপর থেকে মুসলিমরা জাগতিক উন্নয়নেও পিছিয়ে পড়ে আর বস্তুবাদী কারণে কাফিরদের রাষ্ট্রে থাকা শুরু করে। ঠিক এই বিষয়কেই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় অ্যামেরিকান গ্লোবাল পলিসি থিংকট্যাঙ্ক RAND Corporation। ২০০৭ সালে “Building Moderate Muslim Networks নামে একটি বিস্তারিত ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করে RAND. যার সাম আপ করা যায় এক কথায়,
“If you see Mollah Umar doing something by the road, make a Mollah Bradley to do exact the opposite on the other side of the road.”ইসলামের কিতাল, শাতিমে রাসূলের সা. বিধান, হদ কিসাস ইত্যাদি কেটে ছেঁটে তারা নাম দেয় Moderate Islam। আর সম্পূর্ণ ইসলামকে, যেটা কিনা বিভিন্ন ফ্রন্টে মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করছে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, সেটাকে তারা নাম দিয়েছে Radical Islam। আরো দুটো ক্যাটাগরি তারা দিয়েছে- Traditional Islam & Secular Islam. সেটার আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক।৬
পরবর্তীতে ২০১৩ সালে Promoting Online Voices for Countering Violent Extremism নামে তৃতীয় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে RAND. এই রিপোর্টে মডারেট ইসলামের প্রচারের জন্য এবং প্রকৃত ইসলামী শিক্ষাকে (যেটাকে RAND কট্টরপন্থা বলে) মোকাবেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। কট্টরপন্থার বিপরীতে ‘সহিষ্ণুতা ও ক্ষমা’-র শিক্ষা দেয়া যেসব ‘মডারেট’ ‘শায়খ’, মুসলিম কমিউনিটি লিডার ও সংগঠনের নাম নির্দিষ্টভাবে এই রিপোর্টে আলোচিত হয় তাদের মধ্যে আছে – ইয়াসির ক্বাদি ও মুসলিমম্যাটারস, শুহাইব ওয়েব, হামযা ইউসুফ ও যায়তুনা, রাবিয়া চৌধুরি ইত্যাদি। RAND এর পলিসি বাস্তবায়নে এধরনের অন্য ব্যক্তি ও সংগঠনের সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়েও আলোচনা করা হয় এই রিপোর্টে।
তারা ইসলামোফোবিয়ার (Islamophobia is the fear, hatred of, or prejudice against, the Islamic religion or Muslims generally৭) কারণস্বরূপ দেখায়,
“The causes and characteristics of Islamophobia are still debated. Some commentators have posited an increase in Islamophobia resulting from the September 11 attacks, the rise of Islamic State of Iraq and the Levant, some from multiple terror attacks in Europe and the United States, while others have associated it with the increased presence of Muslims in the United States and in the European Union. Some people also question the validity of the term. The academics S. Sayyid and Abdoolkarim Vakil maintain that Islamophobia is a response to the emergence of a distinct Muslim public identity globally, the presence of Muslims in itself not being an indicator of the degree of Islamophobia in a society. Sayyid and Vakil maintain that there are societies where virtually no Muslims live but many institutionalized forms of Islamophobia still exist in them”৮মানে তারা বলতে চায় Radical Islam ইসলামোফোবিয়া তৈরি করে আর Moderate Islam তা রিডিউস করে। এটাই ভয়াবহ। কারণ লক্ষণের শত্রুতা বোঝা যায়। কিন্তু বিভীষণেরটা বোঝা যায় পিঠে ছুরি চালিয়ে বসলে, তার আগে না।
র্যাডিকেল ইসলাম বা ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজমকে তারা ডিফাইন করে এভাবে-
“Islamic fundamentalism has been defined as a movement of Muslims who regard earlier times favorably and seek to return to the fundamentals of the Islamic religion.”৯মৌলিকভাবে ইসলাম কিন্তু এটাই। কিন্তু তারা মডারেট ইসলামকে দাঁড় করায় তার কাউন্টার হিসেবে-
“Moderate Muslim is a label used within counterterrorism discourse as the complement of "Islamic extremism", implying that the support of Islamic terrorism is the characteristic of a "radical" faction within Islam, and that there is a "moderate" faction of Muslims who denounce terrorism.”১০অর্থাৎ, মেহেদি হাসান যেভাবে দাবি করেন১১ যে সাধারণ মুসলিম মানেই মডারেট শান্তিবাদী মুসলিম আসলে তা না। পরিভাষাটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পরিভাষা। এসব বুঝতে আমরা যে স্থানে ঝামেলা করে ফেলি তা হলো আমরা পশ্চিমা সভ্যতাকে কেবলই একটা সভ্যতা হিসেবে দেখছি যার কিনা ভালো খারাপ থাকতে পারে। এটা হলে আমরা কখনোই বুঝতে পারবো না চক্রান্তটা।
তাই ইসলামকে বুঝতে হবে একটা দ্বীন১২ হিসেবে- ধর্ম হিসেবে না। আল্লাহকে বুঝতে হবে একজন ইলাহ হিসেবে- কেবল সৃষ্টিকর্তা হিসেবে না। আর যখন ওয়েস্টার্ন সিভিলিয়ানদের কাছে নিজেকে জাস্টিফাই করবো তখন মাথায় রাখতে হবে ক্রুসেডের ইতিহাস, ইরাকের ৫ মিলিয়ন নিহত শিশুর ইতিহাস, ধ্বংসপ্রাপ্ত মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস, সবশেষে সত্য আর মিথ্যার চিরন্তন সংঘাতের ইতিহাস।
রেফারেন্সঃ
১। নয়া দিগন্ত। ১৭ মার্চ, ২০১৯।
২। ইমাম ইবনে তাইমিয়া- আব্দুল মান্নান
তালিব।
৫। Youtube: Muslim
Americans & US liberal values.
৬। প্রাসঙ্গিকঃ Civil
Democratic Islam - http://ow.ly/f88Q30foshL
Building Moderate Muslim Networks - http://ow.ly/bcuV30fosjT
Building Moderate Muslim Networks - http://ow.ly/bcuV30fosjT
৮। Sayyid, Salman; Vakil, Abdoolkarim (2010). Thinking Through Islamophobia:
Global Perspectives. New York: Columbia University Press. p. 319.
ISBN 9780231702065.
৯। Khan, ed., M. A. Muqtedar (2007). Debating Moderate Islam: The
Geopolitics of Islam and the West. Salt Lake City, UT: University of Utah
Press.
১০। Guidère, Mathieu (2012). Historical
Dictionary of Islamic Fundamentalism. Scarecrow Press. pp. ix. Retrieved 22
December 2015.
১১। Islam in Europe-
Head to Head debate. Oxford Union
১২। সফ ৯।
0 Comments