সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসুর নির্বাচন দীর্ঘ ২৮
বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন আবার প্রমাণ করল বাঙালি নিষ্কর্মা হলেও
প্রচন্ড মাত্রার আশাবাদী। ৩০ ডিসেম্বর, ২০৮ এর প্রহসনমূলক নির্বাচনের পরও অনেকেই
হাটে বাজারে, টিভিতে, রাস্তার কোণায় কানায় বলছিলেন, “যেহেতু ডাকসুর ইতিহাসে সবসময়
সরকারবিরোধীরা জিতেছে তাই...... আশা তো করতেই পারি!” কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিলেন
যে এই তুমুল হিটলারি শাসন শেখ মুজিবের পর আর কেউ করেনি এই দেশের ইতিহাসে।
বাকশালি হিটলারি ব্যবস্থা |
নির্বাচন কী হয়েছে না হয়েছে তা সবাই দেখেছে।
এমনকি যারা নির্লজ্জভাবে ভোট ডাকাতিকারী আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে তারাও জানে কী
হয়েছে। আমার কাছে এক ফ্যানাটিক আওয়ামী সাপোর্টার বললেন, “আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি
করেছে যাতে বিএনপি জামাআত জোট ক্ষমতায় না আসে। ওরা স্বাধীনতাবিরোধী। ওরা ক্ষমতায়
আসলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যেত”। তারপরই আমার পার্টির মিটিং ছিলো বলে চলে গেছি। আফসোস!
তাকে “তাহলে নির্বাচন কী দরকার” কিংবা “উনি কেন কিম জন উনের মতো ঘোষণা করেন না”
জিজ্ঞেস করা হলো না। যাক সে ভিন্ন আলোচনা।
আমি অরণী আপার মতো সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি।
তাই তার মতো সামনাসামনি মুখের উপর সত্য বলে দিতে পারি না। অন্তত ম্যাসেজটা
পৌঁছাক এটা তো আশা করতেই পারি। যাই হোক, আমরা যখন বলব
নির্বাচন পুরো এবসার্ড একটা আইডিয়া এই গভর্নমেন্টের আমলে, তখন প্রশ্ন আসে, “নুরু
কীভাবে নির্বাচিত হলো?” কারণ এই ব্যক্তিরা By Default ধরে নেন তারা কারচুপি করলে সবক্ষেত্রে
ছাত্রলীগই জেতার কথা। কিন্তু এটা বোঝা উচিত কারচুপি করে তারা সেভাবেই আসন সেট করবে
যেভাবে তাদের সুবিধা। The word ‘সুবিধা’ can be defined by
anything.
নুরু ভাইকে শপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে১
তিনি ভোট কারচুপির একগাদা অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তারপর বলেন,
“এতোকিছু সত্ত্বেও তারা আমার বিজয় ঠেকাতে পারেনি......” Well! That doesn’t make sense. Why? কারণ তাদের অভিযোগমতে ছাত্ররা ভোটই দিতে পারেনি। কথাগুলো littlt bit confusing. আর এটাও ঠিক যে যে সরকার শহীদ নিজামীর মতো আন্তর্জাতিক মানের জনপ্রিয়
ব্যক্তিত্বকে ফাঁসি দিতে পারে কিংবা বেগম খালেদাকে কোনো প্রেসার ছাড়াই কারাগারে
আটক রেখে নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের টিকেট ধরিয়ে দিতে পারে সেখানে নুরু ভাই
তো নস্যি।
তাহলে?
নুরুকে ছাত্রলীগই বিজয়ী করেছে।
মন খারাপ করার দরকার নেই। আমি এটা বলব না যে
‘নুরু ভাই একসময় ছাত্রলীগ করতো’ কিংবা ‘নুরু তো ভিত্রে ভিত্রে আওয়ামী গেইম খেলের
রে...’ or something like that. এখানে আমাদেরকে ইতিহাসের দিক থেকে হিসেব করতে হবে। কারণ মানুষ স্ট্র্যাটেজি
ঠিক করে ইতিহাস থেকে২ সেটা কড়া রাজনৈতিক ফ্যামিলিতে বড় হওয়া শেখ হাসিনার না জানার কথা নয়।
ঢাকা ভার্সিটি নিয়ে ইতিহাস কী বলে?
ক) ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনঃ
মানিক ও জিন্নার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ সালের
৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রদের একটি বিশাল সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করা
হয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল এবং সমাবেশের আয়োজন করে। এই ছিলো আন্দোলনের শুরু।৩
খ) ’৬৯ এর গণ
অভ্যুত্থানঃ
১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র
অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূত্রপাত
হয়, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শহর এবং গ্রামের শ্রমিক-কৃষক ও নিম্ন-আয়ের পেশাজীবীসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ
মানুষের মধ্যে ৷ ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব পাকিস্তান
ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)-এর নেতৃবৃন্দ ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে এবং তাদের ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।৪
৬৯ |
একসময় স্বৈরাচারের পতন
হয়।
গ) এরশাদবিরোধী
আন্দোলনঃ
সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই সামরিক আইন জারি করেন । সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ
করে ছাত্ররা । ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলায় জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দীপালী সাহা সহ অনেক ছাত্র/ছাত্রী নিহত হয় । তখন থেকে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে একটি লাগাতার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জেনারেল এরশাদের
বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর জেহাদ নামে একজন ছাত্র
পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হলে সেই মৃত জেহাদের লাশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তৎকালীন ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হয় ।
২৪টি ছাত্র সংগঠনের
নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গড়ে উঠে "সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য" । উল্লেখ্য এই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে উঠার
আগে বৃহৎ দুই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল ও বাংলাদেশ
ছাত্রলীগ আলাদাভাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল । সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠনের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনের সকল শক্তি
একই জায়গায় মিলিত হয়েছিল । এছারাও আরও কিছু শক্তিশালী বামধারার ছাত্র সংগঠন যথেষ্ট পরিমাণে সাংগঠনিক
শক্তির অধিকারী ছিল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ , সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইত্যাদি ।৫
এরশাদবিরোধী আন্দোলন |
একসময় এরশাদের পতন হয়।
৪ নং রেফারেন্সের বইটা
পড়লে লক্ষ্য করবেন,
ঢাকা ভার্সিটি থেকে যত আন্দোলন বের হয়েছে তার সবগুলোই ‘বাংলাদেশ’এর আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।এবং ওদের (আমাদের না) প্রধানমন্ত্রী তা ভালোভাবেই জানেন।
নির্বাচনে প্রচণ্ড
কারচুপির কারণে নির্বাচনের দিনই নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রলীগ বাদে সবাই। এমনকি
তারা কর্মসূচী ঘোষণা করে।৬ তারপর
নির্বাচনে তারা ভিপি বানালো নুরুকে। মারাত্মক সহনশীলতা(!) দেখালেন ছাত্রলীগ নেতা
শোভন। মেনে নিলেন(?) নিজ পরাজয়। সবাইকে মানতে বললেন।৭
সাথে সাথে নুরু ক্লাস
বর্জনের আন্দোলন স্থগিত করলেন।৮ অরণীরা
অনশন করলেন।৯
ফলাফলঃ মোটাদাগে
ছাত্রলীগবিরোধী আর সরুদাগে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন বিভক্ত হয়ে গেলো।
অরণীদের অনশন |
দুটো সুবিধাঃ
১। বিরোধীদের মধ্যে
বিভক্তি তৈরি।
২। আন্দোলন দমন করা।
একই কাজ তারা করেছে
নির্বাচনেও। নির্বাচিত করেছে মীর্জা ফখরুলকে।১০ তাহলে অনুসারীরা
দ্বিধায় ভুগবে, “উনি কি আওয়ামী এজেন্ট? কেউ জিতলো না হেতে জিতলো ক্যাম্নে?”
ঐক্যফ্রন্টের গণফোরাম থেকে ২ জন নির্বাচিত
করা হয়।১১ ঐক্যফ্রন্টের মাথা হলো ড. কামাল আর মূল শক্তি বিএনপি। এই দুইয়ের মধ্যে
দূরত্ব সৃষ্টির এরচেয়ে ভালো পলিসি জানা যায় না। তারা সংসদেও যেতে রাজি হয়েছে।১২
কেয়া বাত হায়! আর কী লাগে!
শত্রুকে পরাজিত করতে হলে তাকে চিনতে হবে। সান
জু বলেন,
“If you know the enemy and know yourself, you need not fear the result of a hundred battles. If you know yourself but not the enemy, for every victory gained you will also suffer a defeat. If you know neither the enemy nor yourself, you will succumb in every battle.”১৩
মুহাম্মাদ আল-আরাবী সা. বলেন,
“নিজেকে জানো, শত্রুকে চিনে নাও”।
এট্টুকু না বুঝলে ঘুমাতে যেতে আর ঘুম থেকে
উঠে কেবল জালিমের পতনের যিকরই করা যাবে। কিন্তু সরকার পতনের কথা হবে আমাদের গ্রামের
এক লোকের মতো। তিনি ২০১৬ সালের ডিসেম্বারে বলেছিলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে
সরকার পতন হবে। হাসিনা সেইফ এক্সিট চাচ্ছে”।
আই সেইড, “অখেই!”
সুত্রs:
২। Sapiens- Yuval Noah Harari.
৩। ভাষা আন্দোলন। বাংলাপিডিয়া -
বাংলাদেশের
জাতীয় জ্ঞানকোষ। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ
২০১৬-০২-১০।
৪। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস (১৮৩০-১৯৭১) : ড.
মোহাম্মদ হাননান : ১৯৯৯
৬। BBC
News বাংলা। ১১ মার্চ, ২০১৯।
৮। দৈনিক ইত্তেফাক। ১২ মার্চ, ২০১৯।
৯। দৈনিক প্রথম আলো। ১৭ মার্চ, ২০১৯।
১০। বগুড়া ৬। দৈনিক প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বার, ২০১৯।
১১। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সুলতান মাহমুদ
মনসুর এবং সিলেট-২ আসন থেকে মোকাব্বির খান। প্রথম
আলো। ৩১ ডিসেম্বার, ২০১৯।
১২। দৈনিক যুগান্তর। ২ মার্চ, ২০১৯।
0 Comments