Ad Code

Responsive Advertisement

ধ্বংসাত্মক নাস্তিকতা


বাংলাদেশের নাস্তিকতা যতটা না নাস্তিকতা তার চেয়ে বেশি হলো ইসলামবিরোধীতা। এটাকেই আবার তারা একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে যেমন বর্তমানে নাদিয়া ইসলাম আসিফ মহিউদ্দীনের বিরুদ্ধে করছে। তাদের লেখাগুলো যতটা না তাদের আদর্শিক তার চেয়ে বেশি কোরানে কী আছে, হাদীসে কী আছে এসব নিয়ে। নাস্তিকদের ইসলামের বিরুদ্ধে যুক্তি দেখানোর একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে। যেটা তাদের নিজেদের স্ট্যান্ডার্ডকে নাইফিং করে। সেটা বাংলার আসিফ মহিউদ্দীন হোক বা রিচার্ড ডকিন্স হোক।
যেমন তারা বলে-
"রাসূলুল্লাহ সা. কেন ৮বছর বয়েসী একজনকে বিয়ে করেছেন?"
"কেন যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণ করা যায়িজ?" (মিথ্যা)
" কেন মুর্তাদের (Apostasy) শাস্তি মৃত্যুদন্ড?"
.................
এ প্রশ্নগুলো তারা করছে অথচ তাদের কাছেই নির্দিষ্ট কোনো নৈতিক ভিত্তি (Moral Base) নেই। Atheists have no MORALITY.  যেমন ধর্ষণ খারাপ বা ৮ বছরের মেয়েকে বিয়ে করা খারাপ হওয়ার পেছনে কোনো ব্যাখ্যা নেই। তারা যে নৈতিক ভিত্তি দাঁড় করায় যেমন Consent বা পারস্পরিক সম্মতি এগুলো তারা যেমন ক্ষেত্রবিশেষে আমল করে না (যেমন ড্রাগ, পর্ণ, 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, ইনসেস্ট ইত্যাদি)।  আবার এই কনসেন্ট কেন একটা নৈতিক ভিত্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে তার কোনো ব্যাখ্যা না তাদের কাছে আছে না তাদের প্রভু সায়েন্সের কাছে আছে। নিলয় ভাই একটা ইন্টারেস্টিং আপত্তি তুলেছেন-
“...ইনফ্যাক্ট, একটা জিনিসকে সর্বসম্মতভাবে 'ভালো' বা 'খারাপ' বলে আখ্যা দেয়ার কোনো মানদণ্ড নেই। সত্ত্বাগতভাবে একটা জিনিস কখনো 'ভালো' বা 'খারাপ' হয় না। কেউ যখন সেটাকে 'ভালো' বলে, তখনই কেবল সেটা 'ভালো'। কেউ 'খারাপ' বললে 'খারাপ'। আবার একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠী বা জাতির কাছে যা ভালো, অন্য ব্যক্তি/গোষ্ঠী/জাতির কাছে তা খারাপ হতেই পারে। বিভিন্ন যুগে একই জিনিস কখনো ভালো, কখনো খারাপ বলে বিবেচিত হয়।

আমরা যা কিছুকে ভালো বা খারাপ বলে জানি, তা হলো কোনো না কোনো ধর্ম বা সামাজিক রীতিনীতি বা রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত ভালো-খারাপ। আমরা আমাদের মনকে সে অনুযায়ী প্রোগ্রাম করে নেই। কিন্তু আমাদের এই নির্মাণ এবং প্রোগ্রামের বাইরে একটা নির্লিপ্ত বাস্তবতার অস্তিত্ব আছে। নির্লিপ্ত বলার কারণ হলো, বুদ্ধিমান সত্ত্বার হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজে নিজে সৃষ্ট এই জড় প্রকৃতিতে ভালো-খারাপ, ন্যায়-অন্যায়ের কোনো পার্থক্য নেই। সাপ ব্যাঙকে খায়। এখানে অন্যায়কারী কে?


তাই বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আপনার চারপাশে আপনি যতকিছুর অস্তিত্ব দেখছেন তা পয়েন্টলেস। মানে এদের অস্তিত্বের কোনো উদ্দেশ্য নেই। আপনার আমার তৈরি করা 'ভালো', 'খারাপ', 'ন্যায়', 'অন্যায়ে'র এই সিস্টেমটাও আসলে উদ্দেশ্যহীন। সবকিছুর শেষে ওই এক জিনিস- মৃত্যু!


বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদর্শনের ভয়াবহ দিক হলো উপরে এখন পর্যন্ত যা যা বলা হলো তা। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্করা আপনাদের সামনে তাদের ধর্মের সবকিছু উল্লেখ করে না। করলে আপনারা তাদের উপর বিরক্ত হয়ে যেতেন। 

আসিফ মহিউদ্দীনরা যখন দাবি করে যুক্তি ব্যবহার করা তাদের রীতি, আর চাপাতি দিয়ে কোপানো মুমিনদের রীতি- এ কথা দিয়ে সে মুমিনদের উপর বিজ্ঞানমনস্কদের একটা মোরাল সুপিরিওরিটি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তার এ কথাটা কোনো ভ্যালু বহন করে না।“


সমস্যা হলো এ সংঘর্ষ আদর্শের, এ সংঘর্ষ সভ্যতার। আপনি কোনো একটা আদর্শের দিকে মানুষকে ডাকলে মানুষকে আপনি জানাতে হবে যে আসলে আপনি তাকে কী দিতে যাচ্ছেন। বা যা দিতে যাচ্ছেন এটা আসলেও দেওয়া সম্ভব। যেমন দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বলতে পারি যে আমাদের খিলাফাহ- খোলাফায়ে রাশিদা আছে যখন কিনা মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে, উমার বিন আব্দুল আজিজের সময় যাকাত দেওয়ার মতো লোক ছিলো না- এমন অনেক উদাহরণ। অর্থাৎ আসলেই আমাদের ঈমানের বাস্তবায়নের পার্থিব একটা বাস্তবতা আছে যদিও তারা তা ঠুনকো বা বায়বীয় বলুক। 
কিন্তু আমরা যদি নাস্তিকদের বাস্তব রূপ দেখি দেখা যায়  

তারা অনেক বিষয়ে যেমন ধর্ষণ, মাদক, ইরোটিকা, পারিবারিকসহ অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। দিলেও তা কার্যকর করার পর আসলেই পরিবর্তন এসেছে তা তারা দেখাতে পারে না। আবার সমস্যাগুলো কেন সমস্যা তার যেমন তাদের কাছে ব্যাখ্যা নেই, সমাধানগুলো তাদের গুরু অর্থাৎ বিজ্ঞানের মানদন্ডে উত্তীর্ণ কিনা তাও পরিষ্কার নয়।

অথচ নাস্তিকতার একটা পরিষ্কার অতীত আছে। নাস্তিকতা পৃথিবীর বুকে বাস্তবায়ন হওয়ার পর আসলে কী হয়েছে। তা হলো কম্যিউনিজম। কম্যিউনিজমই একমাত্র আদর্শ যা কিনা সরাসরিই নাস্তিক্যবাদকে তাদের আদর্শ হিসেবে নিয়েছে আর সব ধর্মকে বানিয়েছে শত্রু।

“Marxism can’t be conceived without Atheism.”

“The Marxist must be an enemy of Religion.”

“Down with Religion. Long live Atheism.”

“Anti religious propaganda is free. Religious propaganda is not free.”


তাই যদি নাস্তিকতার প্রায়োগিক অতীত নিয়ে কথা বলতে হয় তবে কম্যিউনিজমকেই চিহ্নিত করা ছাড়া কোনো গতি নেই। আপনি যদি কম্যিউনিজমের শাসনামল নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চান তাহলে পড়ুন The Black Book of Communism. 
আমরা জানি কম্যিউনিস্টরা মানুষকে যা দেবে বলে লোভ দেখাতো তা হলো- ‘সাম্য’। পুঁজিবাদ ধনীকে আরো ধনী করে, গরীবকে করে আরো গরীব। তাই এখানে তারা মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। অথচ ১৯১৯সালের ২রা ফেব্রুয়ারি রুশ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ লেলিন বলেন,


 ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এক হাজার বার সঠিক কাজ করেছেন যখন তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, সাম্যের প্রতিটি দাবী শ্রেণিবিভাজনকে মুছে দেয়ার জন্য যে প্রতিরোধ তাকে শক্তিশালী করে। এটি বোধগম্যতার বাইরে নির্বুদ্ধিজাত একটি ব্যাপার

অর্থাৎ বিপ্লব হয়ে যাওয়ার পর তারা মানুষকে বলছে যে সাম্য সম্ভব না!
প্রতারণা তো কেবল এখানে শেষ না। তারপর রাষ্ট্রের মিশ্র অর্থনৈতিক (পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক একইসাথে) কাঠামোর সৃষ্টি হয়েছে রাশিয়া, কিউবা, চীন সহ সব কম্যিউনিস্ট রাষ্ট্রে। ব্যাখ্যা হিসেবে তারা বলে যে পুঁজিবাদ ছাড়া নাকি চলা সম্ভব না। শত্রু ছাড়া চলা সম্ভব না!
এছাড়াও ইয়াহুদীদের সাথে আঁতাতও বড় একটা ফ্যাক্টর। কীভাবে ইয়াহুদীদের মাধ্যমেই জন্মলাভ করে ইয়াহুদীদেরকে রাষ্ট্র করে দিতে এবং বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে বিষফোঁড়ার ন্যায় বাঁচিয়ে রাখতে জীবনপণ রেখে যুদ্ধ করেছে কম্যিউনিস্টরা তা লক্ষণীয়।
মুসলিনি স্টালিন কর্তৃক ব্যাপক ধংসযজ্ঞ আর হত্যাযজ্ঞের কথা তো না বললেই না। সে প্রকাশ্যেই ডারউইনিজমকে তার হত্যাকাণ্ডের ব্যাখ্যা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। যেমন হিটলারও করেছিলো।১০ সমস্যা হলো এতদসত্ত্বেও আপনি যখন বলবেন যে এসবই নাস্তিকতার অতীত, তখনই তারা বলে উঠবে, “আরে না না! এর সাথে নাস্তিকতার সম্পর্ক নেই!”
আসিফ মহিউদ্দীনের ব্লগেও আপনি দেখবেন স্টালিনের হত্যাযজ্ঞের সাথে নাস্তিকতার সম্পর্কহীনতা নিয়ে লেখা আছে।১১ তারাই আবার ইসলামকে জাজ করে আইসিসের হত্যাকান্ড দিয়ে। রিচার্ড ডকিন্সের সাথে মেহেদী হাসানের একটা Head to Head এ রিচার্ড ডকিন্স নির্লজ্জের মতো নাস্তিকতাকে মানুষের ভালো কাজের উৎসেচক দাবী করলেও কম্যিউনিস্টদের হত্যাযজ্ঞের সাথে নাস্তিকতার সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন। একইভাবে আইসিসের হত্যাকাণ্ডের কারণ ইসলাম হলেও মুসলিমদের ভালো কাজের সাথে ধর্মের বা আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই এটাও ছিলো তার প্রকাশ্য বক্তব্য।১২  

নাস্তিকতা টিকে আছে এমন হাজারো মিথ্যা, প্রতারণা আর ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের উপর। দিনশেষে নাস্তিকতা আপনাকে কোনো সমাধান দেবে না। তাদের কাছে সামাজিক সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান নেই। তাদের কাছে সমস্যাগুলো সমস্যাই না আর এর সমাধানও প্রয়োজন নেই। কেননা বিরাট বিরাট বই লিখে তারা যে সমাধানে পৌঁছায় তা হলো-
সবকিছুই নিরর্থক... বিস্ময়কর বিশ্ব, রঙ্গিন ফুল বা মানুষ বা বন্যশুয়োর, সূর্য বা নক্ষত্র, গ্রহ উপগ্রহ সবকিছুর জন্যই অপেক্ষা করে আছে তাদের পরিণতি বিনাশ, যা থেকে কোনো উদ্ধার নেই। মহানিরর্থকতায় ভয় পেয়ে কিছু শিশুতোষ রূপকথা তৈরি করতে পারি আমরা, যেমন তৈরি করেছি ধর্মের রূপকথা, তৈরি করেছি স্রষ্টা, পাপ, পূণ্য, স্বর্গ বা নরক। হচ্ছে তাৎপর্যহীন জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার এক স্থুলতম প্রয়াস।“১৩  

রেফারেন্সঃ
২। উমার বিন আব্দুল আজিজ- ইউসুফ আল কারদাওয়ী। প্রচ্ছদ প্রকাশনী।
৩। Religion- Lenin. Introduction.
৪। Religion- Lenin. P.21
৫। Religion- Lenin. P. 19
৬। Soviet Strength- Hewlett Johnson.
৭। দেখুন- The Black Book of Communism
৮। আত তারিখুস সিররিলিল আলাকাতিশ শুয়ুইয়্যাহ আস সাহয়ুনিয়্যাহ। পৃ ১৯৭-১৯৮।
১৩। আমার অবিশ্বাস - হুমায়ুন আজাদ। 

Post a Comment

0 Comments