প্রশ্ন এসেছে যে, মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয়, আরব স্প্রিংয়ের মতো বিষয়াষয়- আমাদের কি এসব ব্যাপারে আস্থাবান হওয়া উচিত? আমি কোনো ডট ছাড়াই আপনাকে বলব – না। আমার এসব কিছুতে একেবারেই আস্থা নেই।
কেন?
কেননা এ সিস্টেম আমাদের না। আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি কিনা। আমি বলব- না। আমরা করি না। গণতন্ত্র এমন সিস্টেম যেখানে আপনি অধিকাংশ (Majority) লোকের নিয়ম অনুসরণ করবেন। অধিকাংশ লোক যদি বলে- “আমরা শারীয়াহ চাই না”, তাহলে আপনি শারীয়াহ আরোপ করতে পারবেন না। তাই এটি আমাদের সিস্টেম না।
আপনি দেখুন, যেখানেই মুসলিমরা গণতন্ত্রের পথে হেঁটেছে সেখানেই পরাজিত হয়েছে। আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলো। তারপর? তারপর ফ্রান্স তাদের উপর আগ্রাসন চালালো, গৃহযুদ্ধ শুরু হলো এবং হাজার হাজার মুসলিম নিহত হলো। এখনো এটি একটি স্বৈরাচারী ডিক্টেটরের হাতে শাসিত দেশ। ফিলিস্তিনে হামাস জয়লাভ করেছে। কিন্তু ফাতাহ, ইসরাঈল বলল, “না। আমরা তোমাদেরকে চাই না”। অর্থাৎ, পশ্চিমা শক্তি আমাদের বলছে, “যদি তোমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটো তবে তোমাদেরকে সেভাবেই গণতন্ত্র ফলো করতে হবে যেভাবে আমরা চাই”। মানে একজন কাফিরকে ভোট দিন।
এমন কাউকে ভোত দিন যে শারীয়াহ আরোপ করবে না। মিশরে এক ইসলামি ক্যান্ডিডেট ছিলো যিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয়েছে কারণ তাঁর মায়ের আমেরিকান সিটিজেনশীপ আছে। এটি ইসলামের কোথায় আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মা ছিলেন কাফির, কিন্তু তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তিনি ছিলেন আমীরুল মূ’মিনীন, তিনি ছিলেন খলীফাহ, তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আর আপনি এখন বলছেন কারো মা আমেরিকার নাগরিক বলে সে প্রার্থী হতে পারবেন না?
এসবে আমরা আস্থা রাখি না। এসব ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তুরস্কে নাজিবুদ্দিন আরবাকানের সময়, যখনই ইসলামিক পার্টি বিজয় লাভ করতো, সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটাতো। অনেককে হত্যা করা হয়। কেন? কারণ তারা ইসলামের হাফ, কিংবা কোয়ার্টার আরোপ করতে চেয়েছিলো। আমি তাদের (গণতন্ত্রের মাধ্যমে যারা শারীয়াহ আনতে চায়) শ্রদ্ধা করি। আমি মনে করি তাদের উদ্দেশ্য ভালো কিন্তু তারা ভুল পথে হাঁটছে। তারা বলেন গণতন্ত্র একটি স্টেপ। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আরো অনেক স্টেপ ক্রস করতে হবে। যদি তুরষ্কের উদাহরণ ধরি। আল্লাহ রজব তৈয়ব এরদোগানকে তাঁর ভালো কাজের জন্য পুরষ্কৃত করুন। কিন্তু আপনি যদি তাঁর মেথড অনুসরণ করেন, ধীরে ধীরে একটি একটি স্টেপ, তাহলে ইসলাম কায়েম হতে ১০,০০০ বছর লাগবে।
আমাদের নিজেদের কাছে সৎ হতে হবে। এই সিস্টেম উম্মাহর জন্য কখনো কাজ করেনি।
গণতন্ত্রের ধারণা পরিষ্কার কুফর। আপনাকে এখানে অধিকাংশ মানুষের নীতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু আল্লাহ বলেন,
“আপনি অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ করলে তারা আপনাকে ভুল পথে নিয়ে যাবে”।
ইসলাম এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। ধরে নিলাম যদি একটি ইসলামী দল ইলেকশানে জেতে এবং তারা শারীয়াহ আরোপ করে, চার বা পাঁচ বছর পর আবার তাদেরকে এ জাস্টিফিকেশানে যেতে হবে যে দেশের মানুষ শারীয়াহ চায় কিনা। এমন দোদুল্যমান অবস্থায় ইসলাম এগোয় না। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগোননি।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, যদি আজ সালাহ আদ দীন আল আইয়্যুবী রাহিমাহুল্লাহ বেঁচে থাকতেন, কিংবা রাসূলুল্লাহ বেঁচে থাকতেন, তারা কি প্রতি কোণায় কোনায় পোস্টার লাগাতেন এটি লিখে যে, “আমাকে ভোট দিন! আমাকে ভোট দিন!” বাস্তবতা হলো, না। একজন পুরুষ(MAN), একজন মুসলিমের সাথে পশ্চিমের পার্থক্য হলো সে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে কোনো সমঝোতা (Compromise) ছাড়াই। আমাদের গণতন্ত্র দরকার নেই। আমাদের শারীয়াহ আছে, আমাদের খিলাফাহ আছে। বিগত হাজার বছর ধরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে যেভাবে তা হওয়ার ছিলো। আমাদের নিজেদের বারবার বোকা বানানো উচিত না এটি বলে যে, “এবার হয়তো এ পদ্ধতি কাজে আসবে!” এটি ইনশা আল্লাহ অনেক ভালো হবে যদি মুমিনদের একটি ছোট দল ক্ষমতা গ্রহণ করে, এটিই হলো পথ এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
আপনি হয়তো তাহরীর স্কয়ারের উদাহরণ দেবেন যে ৫ মিলিয়ন মানুষ সেখানে উপস্থিত, মাশা আল্লাহ মিশর ইসলামের জন্য প্রস্তুত! মিশর শারীয়াহ চায়, কিন্তু পুরোপুরি না। তারা শারীয়াহ চায় কেবল বিয়ে, এলকোহলের ক্ষেত্রে বা এমন কিছু বিষয়াশয়, কিন্তু ইসলামের পুরোটা এখানে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে এসেই রিবা ব্যাংক সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। এখানে একটু একটু করে এগোনো সম্ভব না। প্রশ্ন হলো আপনি আল্লাহর বিধান অনুসারে শাসন করবেন নাকি না।
আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী যারা সিদ্ধান্তগ্রহণ করে না তারা কাফির।আপনি শারীয়াহ অর্ধেক আরোপ করলে এটি আপনাকে হাফ মুসলিম বানাবে না। এটি আপনাকে একজন কাফির বানিয়ে দেবে। আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে পরিষ্কার থাকতে হবে। আমরা ইসলামকে ভালোবাসি। আমাদের ইসলামের নাম খারাপ করা ভুয়া মুসলিমের দরকার নেই। তারা বলবে তারা শারীয়াহ দিয়ে শাসন করবে। কিন্তু তারা কিছু শারীয়াহর কিছু বিধান আরোপ করবে, মানুষ কোনো পরিবর্তন দেখবে না। ইসলাম একটি চেইন। এখানে অনেক আপনি কিছু আরোপ করে সুফল না পাওয়ারও ভালোমানের সম্ভাবনা আছে। তখন মানুষ শারীয়াহকে আক্রমণ করবে। আমাদের এমন মুসলিম প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী যারা সিদ্ধান্তগ্রহণ করে না তারা ফাসিক।
আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী যারা সিদ্ধান্তগ্রহণ করে না তারা জালিম”।
লেকচারটি দিয়েছেন শাইখ মূসা সেরেন্টনিও। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ইতালিক ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৫তে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টরি ইউনিভার্সিটিতে Communications and History র উপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আপোষহীন দাওয়াহর জন্য আইসিসের মিথ্যা মামলায় তাকে জেলে নেয় অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট। আল্লাহ উনাকে হিফাজত করুন।
আর অনুবাদ এই অধমের।
0 Comments