মুস্তাজাবুদ দাওয়া মানে কী জানেন? এমন লোক, যে দোয়া করার সাথে সাথে আল্লাহ কবুল করেন। এমন কাউকে পেয়েছেন? না না, আমিও পাইনি। কিন্তু আমি এমন একজনকে পেয়েছি, আল্লাহ যার দোয়া কবুল করেছেন। এমন একটা অবস্থায় করেছেন, যে অবস্থায় আপনার দৃষ্টি বলবে এটা হবে না। আজকে দেখা যাচ্ছে, না! অক্ষরে অক্ষরে আল্লাহ্ তাঁর দোয়া কবুল করেছেন। আমি নিজে দেখে এসেছি।
ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই প্রবল দ্বীনদার ছিলো ভাবছেন? বরং তার উল্টো। না তার পরিবারের কেউ দ্বীনদার, না তার পরিবেশ দ্বীনদার। জেনারেল লাইনের পড়ালেখা করার সুবাদে দ্বীন থেকে সরে গিয়েছে আরো দূরে। ইংরেজি বিতর্কের জঘন্য জগৎসহ নষ্ট-ভ্রষ্টদের সাথে ছিলো তার আনাগোণা। নিয়মিত জন গ্রিন পড়ার সবক দেওয়া বড় ভাইদের সাথে ছিলো তার ওঠাবসা।
ঘটনার শুরু ইন্টারে।
স্কুল-কলেজে সুশীল, ভদ্র, সাহস করে দুটো বাক্য বলতে না পারা ছেলেদেরকে কলেজে এসে যা হতে দেখেছি তা অবিশ্বাস্য। আমাদেরই কতো সমস্যা হয়ে গিয়েছে। কলেজে একবার, ভার্সিটিতে উঠে একবার নষ্ট বাতাসের আঘাতে পড়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। স্বাধীনতা, যৌবন, উন্মাদনা, ‘কাছে আসার গল্প’, ‘বন্ধু-আড্ডা-গান’এ হারিয়ে যেতে দেখেছি অসংখ্য ভাইবোনকে। মুক্তির পথ জানা ছিলো না। অসম্ভব মাত্রার আত্মনিয়ন্ত্রণ না থাকলে সম্ভব না।
ঠিক সে সময়টাতে চকবাজারের এক দ্বীনদার স্যারের কাছে পড়তে ভর্তি হয় আমার এ বন্ধু। সে স্যারের ব্যাপারে তার থেকেই শুনুন মন্তব্য,
“এক্স [ছদ্মনাম] স্যার আমাদেরকে প্রত্যেকটা কাজে সুন্নাহ ধরতে শিখিয়েছেন। স্যার আমাদেরকে জাস্ট দ্বীন শেখাননি, উনি বরং আমাদেরকে একটি পরিবেশ দিয়েছেন। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে দ্বীনের মধ্যে সিরিয়াসনেস গড়ে উঠেছে।”
ও হ্যাঁ, আমি তো বলিই নি কেন ওকে আমি মুস্তাজাবুদ দাওয়াহর বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করলাম। সেই এক্স স্যার তাকে দ্বীনের দাওয়াহ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, “দ্বীনে আসছো না? সবার প্রথম বাঁধা পাবে পরিবার থেকে।” তারপর সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, “আল্লাহ্! আমাকে যেন এ অবস্থায় পড়তে না হয়। হে আল্লাহ্! আপনি আমার পরিবারের অন্তর পরিবর্তন করে দিন।”
সে যখন ফযরের সালাত আদায় শুরু করলো, তার ভাই-বোন, বাবা- সবাই বাঁকা চোখে দেখা শুরু করলো। সে বিব্রতবোধ করতো আর আল্লাহর সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকতো। সে সময় কেবল তার মা’ই বললেন,
“আমার ছেলে যদি ফযরের সালাত আদায় করে আর আমি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে সেটা তো আমার জন্য লজ্জার।”
সুবহানআল্লাহ! সেদিন থেকে আর কোনোদিন আন্টি ফযরের সালাত কাযা করেননি।
ধীরে ধীরে আল্লাহ্ তার পরিবারের সবাইকে দ্বীনে নিয়ে আসেন। আমি মাগরিবের সালাত পড়ে তার বাসায় ঢোকার সময় তার ভাইয়ের কোরআন তিলাওয়াত শুনেছিলাম। বলে উঠেছিলাম, “মাশা-আল্লাহ! ভাইয়ার তিলাওয়াত তো জোস।” সে এমনও বলেছে,
“আমার বাসায় এখন সবচেয়ে কম দ্বীনদার আমি। এখন আমার আব্বু-আম্মু সালাত, জামাআতের জন্য আমার সাথে চিল্লান।”
অবাক হবেন না, এটা তার আত্মসমালোচনার জায়গা। এভাবেই বলতেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু,
“মানুষ যদি আমার অন্তরের অবস্থা জানতো তাহলে তারা আমাকে পাথর মেরে মেরে হত্যা করতো।”
সে এখনও এইচএসসির রেজাল্ট পায়নি, দ্বীনে এসেছেও বেশিদিন হয়নি, এখনই সে আরবী শেখার পথে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। মৌলিক শেখাটা শেষ, এখন কেবল প্র্যাক্টিস। সবর, যুহদের বই কেনাকে আমি ওয়েস্ট ভাবতাম, সে আমাকে এটাতে আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। আরবী শেখার গাইডলাইন আমি তার থেকে পেয়েছি। আক্বীদাহ নিয়ে তার নলেজ অনেক ডিপ। আমি তাকে কখনো জামাআত ছাড়া সালাত আদায় করতে দেখিনি। ডিবেট থেকে সরে আসা সহজ নয়। যারা করে তারা জানে। পলিটিক্যাল আউটরেইজে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রবল তাকওয়া নিয়ে সে বের হয়ে গিয়েছে।
জাস্ট এদিকের ইলম না, ডিবেটের সুবাদে এ অসম্ভব জিনিয়াস ছেলেটা এতো পড়েছে, এতো পড়েছে যে সে কথা বললে আমি তার দিকে থ হয়ে তাকিয়ে থাকি। না, না, সে কঠিন করে বলে না। বরং সে আমার লেভেলে নেমে সহজ করে বলে। ফেসবুকে ‘লজিকেল ফ্যালাসি’ নিয়ে থাকা অনেক অনলাইন কোর্স করা ব্যক্তিদের থেকেও অনেক ডিপ লেভেলের নলেজ রাখে সে। সে কলম ধরে, বক্তব্য দেয় না, ভিডিও বানায় না। তার একটাই কথা,
“আমি এখনো জাস্ট পড়বো। আর আমি তো লেখালেখির জন্য পড়ি না, আত্মস্থের জন্য পড়ি।”
আমি এজন্য নিজেকে ধন্য মনে করি যে আল্লাহ্ ছেলেটার সাথে আমার বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাকে কবুল করুন ও তার উসিলায় আমাকেও। আমিন। সুম্মা আমিন।
[আমি তার নাম বলবো না। সে পছন্দও করবে না। আপনি যদি আসলেই সিন্সিয়ার হন, সত্যিই আমলের উদ্দেশ্যে তার এডভাইজ নিতে চান, উপকৃত হতে চান আমাকে নক দিন- যোগাযোগ করিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ্।]
১ম জন
0 Comments