পার্মানেন্ট রেকর্ড। এ যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপনে চালিয়ে যাওয়া বৈশ্বিক নজরদারির এক উপাখ্যান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ এবং এনএসএ’র সাবেক অফিসার এডওয়ার্ড স্নোডেন ২০১৩ সালে মার্কিন ইন্টারনেট নজরদারির উপর থেকে পর্দা উন্মোচন করেছিলেন। মার্কিন এই হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে বিশ্ব জানতে পারে PRISM, STELLARWIND, XKEYSCORE সহ বেশ কিছু নজরদারি ব্যবস্থার কথা।
স্নোডেনের সেই তথ্যফাঁসের কারণেই মানুষ জানতে পারে তাদের প্রতিটি অনলাইন কমিউনিকেশনের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। পার্মানেন্ট রেকর্ড। যখন ইচ্ছা তখন কাওকে বলির পাঠা বানানোর জন্য মার্কিন সরকার সেই রেকর্ড ব্যবহার করতে পারবে।
এডওয়ার্ড স্নোডেন এক জিনিয়াসের নাম। এই সাবেক গোয়েন্দা নিজের জীবন বাজি রেখে মার্কিন সরকারের মুখোশ উন্মোচন করার দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন নির্বাসিত জীবন।
‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ বইটিতে স্নোডেন তার রোমাঞ্চকর, তথ্যবহুল, নাটকীয় জীবনের কথা বলেছেন। তার এই জীবনের সাথে একইসূত্রে গাথা আছে মার্কিন সরকারের অবৈধ বৈশ্বিক নজরদারির আদ্যোপান্তের বিবরণ। ব্যাপক তথ্যবহুল এই বইটিতে আছে চমকপ্রদ বেশকিছু সিস্টেম ও সার্ভারের কথা। স্নোডেন বইটিতে রাজনীতি ও প্রযুক্তির চমৎকার সম্মিলন ঘটিয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিহাসের ছোঁয়াও আছে বইটিতে।
মানুষের প্রতিদিনের জীবনে গোপনে নজরদারি চালিয়ে মার্কিন সরকার মানুষের গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে আসছিল। তা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। একই সাথে তা ছিল যেকোনো স্বাধীন সমাজের মূল্যবোধের লংঘন। এডওয়ার্ড স্নোডেন সরকারের এই গোপন বৈশ্বিক নজরদারির মাধ্যমে সংবিধান লংঘনের প্রমাণ সম্বলিত কিছু ডকুমেন্টস সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে উন্মোচন করেন। তিনি উন্মোচন করেন এক ঘৃণ্য সত্যের। এই সত্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত তার জন্য সুখকর কিছু ছিলনা। সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ও তার পরিণতি নিয়েই সাজানো হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়।
এডওয়ার্ড স্নোডেন, একজন কম্পিউটার জিনিয়াস, তিনি একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি আইসিতে মার্কিন সরকারের চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন আবার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে নির্বাসিত জীবনে গণমানুষের অনলাইন-অফলাইন জীবনসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। মার্কিন সরকারের এক গোপন সত্য উন্মোচনকারী এই ব্যক্তিটি অনেকের কাছে নায়ক।
সাংবিধানিক ও ব্যক্তিগত নীতি-নৈতিকতা ও সত্যের সমর্থন করতে গিয়ে নিজের দেশের সরকারের কাছেই তিনি পেয়েছেন দেশদ্রোহী খেতাব।
তিনি নায়ক
নাকি দেশদ্রোহী? এই প্রশ্নের উত্তর এডওয়ার্ড স্নোডেনের জীবনী ‘পার্মানেন্ট
রেকর্ড’ বইটিতে খুঁজে পাবেন। (এ লেখাটি নেওয়া হয়েছে প্রজন্ম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হওয়া এ বইয়ের অনুবাদের ফ্ল্যাপ থেকে)
0 Comments