[১]
পৃথিবীর সকল যুদ্ধেই সিভিলিয়ান বা সাধারণ নাগরিক হত্যা করা একটি
সাধারণ ঘটনা। এটি ঠিক না ভুল সে কথা বলছি না, কিন্তু এটি
প্রায় প্রতি যুদ্ধের অবিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে ছিলো ১০-১৫%, ২য়
বিশ্বযুদ্ধের সময় হয় ৫০-৫৫% আর এখন রীতিমতো ৭৫%।[1]
সিভিলিয়ান হত্যা কি ইসলামী শারীয়াহয় বৈধ নাকি অবৈধ তা নিয়ে প্রথম
আলোচনা শুরু হয় ৯/
১১এর ঘটনার পরে। এছাড়াও আমেরিকার আগ্রাসন বিরোধী একমাত্র দলের
নেতা উসামা বিন লাদেন বলেছেন, [2]
ইন্না কিতালাল আমেরিকান ওয়া ইন্না কিতালাল আমেরিকান। হুয়া মুজামিমিল ঈমান হুয়া মুজামিমিত তাওহীদ।
অর্থাৎ,
ঈমান ও তাওহীদের স্বার্থে আমেরিকানদের হত্যা করুন।
তিনি তার পয়েন্ট জাস্টিফাই করতে বলেছিলেন,
আমরা তো সুইডেনের মানুষকে হত্যার কথা বলছি না।
আল কায়েদা ইন ইয়েমেনের অন্যতম নেতা আনওয়ার আল আওলাকি বলেন,
Don't consult with anyone for killing Americans.[3]
আবার ফিল্ডের ইসলামী শক্তিগুলোর মধ্যে আল কায়েদাই নিজেদেরকে রক্ত প্রবাহের
ক্ষেত্রে সতর্ক শক্তি বলে দাবী করে। এ বিষয়গুলো জলঘোলার তৈরি করে।
সিভিলিয়ান হত্যা বৈধ কিনা সে আলোচনায় না গিয়ে আমরা যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজিগত
দিক থেকে একে ব্যাখ্যা করি। সে আলোচনা আলিমদের জন্যই থাক। তবে কিছু রেফারেন্স এড
করা যায়-
১। শাইখ আহমাদ শাকির রাহ.র ফাতওয়া।
২। সহীহুল বুখারী ৩০১৩, মুসলিম ১৭৪৫,
তিরমিযী ১৫৭০, আবূ দাউদ ২৬৭২, ৩০৮৩, ৩০৮৪, আহমাদ ২৭৯০২,
সহীহ আবু দাউদ ২৩৯৭। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৮৩৯ ইত্যাদি ও এগুলোর ব্যাখ্যা শাহরুন নববী থেকে পড়ে নিতে পারেন।
৩। সিরাত থেকে আবু বাসিরের ঘটনা, তায়েফ আক্রমণ
ও বদরের প্রেক্ষাপট পড়ে নেওয়া যায়।
[২]
সিভিলিয়ান হত্যা অবৈধ এজন্য ছিলো যে তারা শত্রুযোদ্ধাদেরকে কোনো
প্রকার সহায়তা করছে না। কিন্তু আমেরিকানদের ব্যাপারে কিছু পয়েন্ট ফেলা যায় না।
যেমনঃ
ক। বর্তমান গণতান্ত্রিক সময়ে এসে যখন কেউ ইশতেহারে 'সন্ত্রাস দমন'এর প্রতিশ্রুতি দেয় এবং মানুষ তাকেই
সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতা দেয় তখন সাধারণ মানুষকে নিরপরাধ বলাটা কষ্টকর।
খ। করের মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালী করা,
গ। 'সন্ত্রাসবাদের' বিরুদ্ধে অধিকতর হিংস্র সরকারকে সমর্থন দেওয়া,
ঘ। নিজের পরিবার থেকে সন্তানদেরকে সরকারি চাকুরি ও সেনাবাহিনীর
চাকুরিতে পাঠানো ইত্যাদি।
প্রেসিডেন্ট বুশ ঘোষণা করেছিলেন,
"Either you are with us or with the terrorists (Mujahideen)."[4]
আমরা তারপর সাধারণ মানুষের একযোগে সমর্থন দেখতে পাই। এমনকি সেখানকার
মুসলিমরাও। এখনও তারা ইলেক্ট করছে মুসলিমবিদ্বেষী ট্রাম্প বা War on Terror এর অন্যতম নাটের গুরু
হিলারিকে।
শান্তির গুরু (!) আমেরিকাকে আমরা দেখি এক ইঞ্চিও বোমার বাইরে না
রাখার জন্য আফগানে ইনডিস্ক্রিমিনেট শেলিং করতে।[5] এছাড়াও
কেবল তেলের জন্য ইরাকে ৬লক্ষ শিশু হত্যা করতে।[6] তারাই
যখন ভন্ডামি করে জেনেভা কনভেনশন দেয় তখন আশ্চর্য হতে হয়।
সেখানে যদিও তারা নন কমব্যাট নাগরিককে হত্যা করা অনৈতিক বলেছে, তারপরও তারা 'কিন্তু' দিয়ে কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে।[7]
যদিও আমাদের এসব প্রয়োজন নেই। আল্লাহর আইনই আমাদের জন্য যথেষ্ট
বিইযনিল্লাহ।
পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আকবর খান তার 'সাইফুল্লাহ খালিদ বিন ওয়ালিদ' বইয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ
রা.র যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটি ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট
এনেছেন।
কখনো কোনো সেনাবাহিনীকে দেশের বাইরের কোনো ফ্রন্টে বা প্রক্সি
ওয়ারে যুদ্ধ করতে হলে নিজ দেশের সাহায্য প্রয়োজন- সেটা সেনা সরবরাহ, রেশন সরবরাহ ইত্যাদি। এছাড়াও দেশ শংকামুক্ত থাকলে এটিও
মনস্তাত্ত্বিকভাবে একনিষ্ঠ থাকা যায়।
এটি ঐতিহ্যবাহী সত্য। সালাহ আদ দ্বীন আইয়ুবী রাহ.র জীবন দেখুন।
যখনই খ্রিস্টানরা মিশরে অরাজকতা তৈরি করেছে হয় তিনি পরাজিত হয়েছেন অথবা তাকে অন্য
কারো হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে।[8] বর্তমানে দেশে
অস্থিতিশীল অবস্থা থাকায় আমেরিকাকে ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।[9]
ভারতের অন্যতম স্ট্র্যাটেজি হলো তারা সীমান্তে মাঝেমধ্যে মানুষ
মারে এজন্য যেন সরকার অভ্যন্তরীণভাবে চাপের মুখে থাকে।[10] এখন লক্ষ্য করুন।
আপনাকে যদি আমেরিকাকে ধ্বংস করতে হয় তবে অবশ্যই তাকে অবকাঠামো ও
অর্থনৈতিকভাবে আক্রমণ করতে হবে। ইয়াসির ক্বাদিদের[11] কথা
শুনতে মিষ্টি হলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
শত্রুকে যেমন সামনাসামনি প্রতিরোধ করতে হয় তেমনই তার শক্তির উৎসও
বন্ধ করে দিতে হয়।
আরো মনে রাখতে হবে এটা রাজ্য জয়ের জন্য দুই রাজার লড়াই নয়, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সেদিক
থেকে আমেরিকার ভেতরে অবকাঠামোগত হামলা করার প্রয়োজন আছে। এবং অতি অবশ্যই তাতে কম
বেশি সিভিলিয়ান নিহত হবে।
[৩]
উসামা বিন লাদেন ও আনওয়ার আল আওলাকি তাদের পৃথক পৃথক বার্তায়
বলেছেন যে আমেরিকার মানুষদের নিরাপত্তা ততক্ষণ হুমকির মুখে থাকবে যতক্ষণ না
আমেরিকার মানুষ তাদের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সৈন্য
ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করে। এটি ইসলামোফোবিয়ার জন্ম দেয়। আওলাকি এ ব্যাপারে বলেন,
"হাজার হাজার মুসলিম যেখানে মিসাইল এটাক ও ইনডিস্ক্রিমিনেট শেলিং এর শিকার সেখানে আমেরিকান মুসলিমরা কোন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়? আমেরিকানরা যেহেতু যুদ্ধরত কাফির তাই তাদের প্রতি আমাদের এ বার্তা দিতে হবে যে তোমরা সীমালঙ্ঘন করলে আমরাও করবো। গ্রানাডার মুসলিমরা এ ভুল করেছিলো। যুদ্ধরত কাফিরদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে বিজয়ী হওয়া যায় না।"
ওখানের মুসলিমরা কেন হিজরত করে না যেখানে কাফির সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে
অবস্থানকারী মুসলিমদের থেকে আল্লাহর রাসূল নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন?[12] আর যদি ইসলামোফোবিয়া থেকে হয় দারুণ কিছু তবে ইসলামোফোবিয়াই কি ভালো নয়?
মুহিব খান যেমন বলেছেন,
তোমরা যখন নির্বিচারে হামলা চালাও মুসলমানের গ্রাম শহরে/
বৃদ্ধ নারী যুবক শিশুর বক্ষ হতেও এমনি করেই রক্ত ঝরে/
মাজলুমানের রক্ত যখন আত্মঘাতি হয় তোমাদের অত্যাচারে/
লক্ষ প্রাণের বদলা নিতে পালটা আঘাত হানবে তারাও তোমার ঘাড়ে।[13]
কীভাবে আপনি অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করবেন? বুঝিয়ে? মোটিভেট
করে? মাইকেল শইয়ারের মতো ফিল্ডের মানুষরা হাজারবার বলছেন,
"Islamic radicals don't blow up themselves cause my daughter goes to University. Our intervention is pushing them to fight back."[14]
কেউ কি শুনছে? সব হারিয়ে যাচ্ছে প্রোপাগাণ্ডার তোড়ে। তাই এ মূহুর্তে সবচেয়ে ভালো
স্ট্র্যাটেজি হলো তাদেরকে এ ম্যাসেজ পৌছানো যে 'যতদিন
আমাদের উপর তোমাদের ট্রুপ আক্রমণ করছে ততদিন তোমরাও নিরাপদ থাকবে না।' উসামা বিন লাদেন বলেছিলেন,
The path to security is for you to lift your oppression from us.[2]
যেমন হামাস ইসরাঈলের নিচে এতো টানেল করেছে যে ইয়াহুদীরা
সবসময় এ ভয়ে থাকে যে কবে তাদের ঘরের নিচ থেকে উঠেই না হামাস আক্রমণ করে! [15]
[৪]
ওরা যখন সন্ত্রাসী বলে তখন ওরা কেবল সিভিলিয়ান মারা একদল মানুষকে
জংগী বলে না। তেমন হলে নিদাল হাসান ভাইয়ের কী
দোষ ছিলো? তিনি তো কেবল সামরিক বাহিনীর সদস্য মেরেছিলেন।
ইইউর সদস্য আমেরিকা কীভাবে ও কেন তার মৃত্যুদণ্ড দিলো? আসলে
তারা সন্ত্রাসী বলতে মূলত তাদের আগ্রাসনবিরোধী, তাদের
লিবারেলিজম- হিউম্যানিজম বিরোধী সকল মানুষকেই বোঝায়। এরা সবাই সন্ত্রাসী, এরা সবাই হত্যাযোগ্য। [বিস্তারিত পড়ুনঃ
চিন্তাপরাধ- আসিফ আদনান] আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আজকালকার জিহাদী বা উগ্রবাদী
বই বলে বলে গ্রেফতার করার রেওয়াজ দেখেছেন? আমি যদি ধরেও
নিই ফাযায়েলে আমল টাইপ বইও উগ্রবাদী বই তারপরও বলতে হয় আপনি উগ্রবাদী কিছু করলেন
না, সাথে কোনো বড় ছুরিও রাখলেন না, কেবল পড়লেন, কেবল জানলেন- তাও আপনি
হত্যাযোগ্য।
শেষে শাইখ মূসা সেরেন্টনিও হাফিজাহুল্লাহর কথা সামান্য পরিমার্জন
করে বলি। আমরা যখন সমালোচনা করতে শুরু করি তখন আমরা ভুলে যাই আমরা কাদের ব্যাপারে
কথা বলছি। তাদের অবস্থা হলো তাদেরকে সবসময় সন্ত্রস্ত থাকতে হয় কবে কোন বোমার আঘাতে
তাদের জীবন চলে যায়। কবে কোন বোনকে তুলে নিয়ে যায়। এরাই তারা যারা পৃথিবীর
মজলুমদের জন্য প্রথম অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। এরাই তারা যারা ব্রিটিশ আমলের
অস্ত্র দিয়ে অত্যাধুনিক আমেরিকার বিরুদ্ধে কেবল আল্লাহর সাহায্যকে পুঁজি করে নেমে
পড়েছে। তাই আমাদের তাদের ব্যাপারে কথা বলার ব্যাপারে জিহ্বা সংযত করা উচিত।
জিহ্বার সুন্নাহ অনুসরণ করে তাদেরকে সংশোধন করা উচিত।
দিনশেষে আল্লাহ্ আমাদেরকে আরো যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার তৌফিক
দিন এবং মুজাহিদদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরকে নরম করে দিন। আল্লাহ্ মুজাহিদদেরকে
প্রতি ফ্রন্টে বিজয়ী করুন এবং মানবতার সেই সোনালী দিনগুলো ফিরিয়ে আনুন। আমিন। ইয়া
রাব্বাল আলামীন।
রেফারেন্সঃ
1. Ethics to fight । BBC
2. Full transcript of bin Ladin's speech । Al
Jazeera
3. Awlaki to the West - As Sabab Media
4. President George
W. Bush addresses a Joint Congress about the War on Terror
5. In The Hand of Taliban- Yivon Ridley
6. US Sponsored Genocide Against Iraq 1990-2012.
7. Back To Point 1.
8. The Diary of Bahauddin Shaddad.
9. Why the USA lost
the war in Vietnam
10. যেমন ফেলানি হত্যা।
11. 20th Century
Jihadist Movement- Sh. Yasir Qadhi
12. অমুসলিম
দেশে বসবাসের বিধান। Islam QA BD
13. .জিহাদ-
মুহিব খান
14. OBL - Michael
Scheuer
15. Hamas crimes
and tactics - Israel Ministry of Foreign Affairs
0 Comments