Ad Code

Responsive Advertisement

লেটার টু আসমা



আসমা বেলতাগি। তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মাদ বেলতাগির মেয়ে। তিনি পড়ালেখা করতেন ও একই সাথে ইখওয়ানের বিপ্লবীদের মিডিয়া উইং এ কাজ করতেন। 
সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাফেজ মুহাম্মাদ মুরসীর পতনের পর মিশরের আপামর জনসাধারণের মতোই রাস্তায় নেমে আসে বেলতাগি পরিবার। শেষটা খুব ব্যতিক্রম নয়। একদিন স্নাইপারের গুলিতে শহীদ হোন বোন আসমা। এ আন্দোলনে তার পরিবারে তার পিতা ছাড়া সবাই শহীদ হোন।

অতি সাধারণ গল্পের নায়িকা হয়েও তিনি অসাধারণ - তাদের কাছে যারা তার মতোই একটা গঠনমূলক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে।

তার শাহাদাতের পর মুহাম্মাদ বেলতাগি তার স্মরণে একটি চিঠি লিখেন। তারই বংগানুবাদ নিম্নে দেওয়া হলো।

"প্রিয় আদরের মেয়ে ও অসাধারণ টিচার,

"আবার দেখা হবে"- এ কথাটা না বলে আমি কখনোই তোমার থেকে বিদায় নিই নি। সকল বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে গিয়ে এক তুমুল চ্যালেঞ্জিং জীবন কাটিয়েছো তুমি। সব বাধা পেরিয়ে তুমি মুক্তির প্রেমে পড়েছো। তুমি সবসময় এ উম্মাহর ঢেলে সাজা ও সৃষ্টি হওয়ার অপেক্ষা করতে যেন এ উম্মাহ পৃথিবীর বুকে তার সত্যিকারের স্থান ফিরে পায়।

তুমি তোমার মেধা, যোগ্যতাকে টিকিয়ে রেখেছিলে। কলেজের সবচেয়ে সেরা ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও তুমি সবসময় পড়তে। কখনোই ভাবোনি, " আরে! আমি তো অনেক জেনে গেছি!" ছোট এ জীবনটাতে আমি তোমার সাথে বেশি সময় কাটাতে পারিনি। অবশ্য তার সুযোগও ছিলো না। শেষবার আমরা যখন একসাথে রাবা আল আদউইয়াতে গেলাম, তুমি আমাকে বকুনি দিয়েছিলে, "আমরা পরিবারের সবাই যখন একসাথে থাকি তখনও তোমাকে পাই না।"

আমি বলেছিলাম, "আমরা দুনিয়াতে একে অপরকে চাইলেও সময় দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারি না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আমরা সবাই জান্নাতে যাই আর আমার মেয়েটাকে আমি অনেক সময় দিতে পারি। ওকে?"

তুমি শহীদ হওয়ার দুইদিন আগে আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম। তুমি বিয়ের কনের সাজে ছিলে। তোমাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিলো।
আমি তোমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম, "মা! আজ কি তোমার বিয়ে?"
"আমার বিয়ে সন্ধ্যায় হবে না, বাবা। দুপুরে হবে।" তুমি বলেছিলে। বুধবার দুপুরে শহীদ হয়েছো এটা শুনেই আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যাটা বুঝতে পেরেছিলাম। 

আমরাই সঠিক পথে আছি ও আমাদের শত্রুরা অন্তঃসারশূন্য- তোমার শাহাদাত আমাদের এ বিশ্বাসকেই আরো দৃঢ় করেছে। মা! আমি খুবই দুঃখিত। আমি তোমার শেষ বিদায়ে তোমাকে শেষ চুমুটা খেতে পারিনি। কিন্তু তোমার দাফনে দোয়া করতে পারার সম্মান আমি লাভ করেছি। মৃত্যু বা কারাগারের অন্ধকার কুঠুরির ভয়ে আমি সেদিন অনুপস্থিত ছিলাম না। আসল কারণ হলো তারা আমাকে জেলে রেখেছিলো। তোমার কাছে জালিমরা আমাকে যেতে দেয়নি, মা। তুমি যেজন্য জীবন দিয়েছো, সেজন্যই তারা আমাকে আটকে রেখেছে। নির্মমতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে তোমার প্রতিবাদ তাদের সহ্য হয়নি। তাই তারা তোমাকে হত্যা করেছে। হে সন্তুষ্ট আত্মা! কী মারাত্মক দৃঢ়সংকল্প ছিলো তোমার! 

আমি বিশ্বাস করি, তুমি আল্লাহর প্রতি তোমার ওয়াদা সত্যায়ন করেছো। তিনিও ইনশাআল্লাহ তোমার প্রতি তাঁর ওয়াদা সত্যায়ন করবেন। 

শেষে, প্রিয় আদরের মেয়ে ও অসাধারণ টিচার,
"আবার দেখা হবে"- এ কথাটা না বলে আমি কখনোই তোমার থেকে বিদায় নিই নি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর শাসন ও সত্ত্বার খুব কাছাকাছি হাউজে কাউসারের তীরে রাসূলুল্লাহ সা. ও তার সাহাবাদের উপস্থিতিতে আমাদের দেখা হবে। পূর্ণ হবে আমাদের একে অপরকে বেশি সময় দেওয়ার আশা।

ইতি,
তোমার আব্বু।

ইংরেজীতে পুরো চিঠিটি দেখুন- এখানে
আসমা বেলতাগি হত্যার ভিডিও-


Post a Comment

0 Comments